ইউরোপ পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি সমৃদ্ধ এবং ঐতিহাসিক মহাদেশ। ভৌগোলিকভাবে এটি ইউরেশিয়া নামক এক বৃহৎ ভূখণ্ডের পশ্চিম অংশ। আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ।
এর মোট আয়তন ৯৯ লক্ষ ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর মোট আয়তনের মাত্র ৬.৮ শতাংশ। এই মহাদেশে মোট ৪৮টি স্বাধীন দেশ রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী কসোভো ৪৯তম দেশ হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও, তা এখনো জাতিসংঘ কর্তৃক পুরোপুরি স্বীকৃত নয়।
ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
বৃহত্তম দেশ | রাশিয়া (আয়তনে ও জনসংখ্যায়) |
ক্ষুদ্রতম দেশ | ভ্যাটিকান সিটি (আয়তনে ও জনসংখ্যায়) |
ইউরোপের প্রবেশদ্বার | ভিয়েনা |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পিতৃভূমি | রাশিয়া |
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপের মালিকানা | ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ডের মালিক) |
গ্রিনল্যান্ডের প্রধান জাতি | এস্কিমো |
বুট জুতার মতো দেখতে দেশ | ইতালি |
ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ইউরোপের ইতিহাস বেশ জটিল এবং ঘটনাবহুল। বিংশ শতাব্দীতে এই মহাদেশ দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে।
- সোভিয়েত ইউনিয়ন: রাশিয়ার পূর্বনাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং এর পতনের পর মোট ১৫টি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
- বার্লিন প্রাচীর: সাবেক পূর্ব জার্মানি কর্তৃক নির্মিত এই প্রাচীরটি ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের প্রতীক। ১৯৮৯ সালে এটি ভেঙে ফেলা হয় এবং ৩ অক্টোবর ১৯৯০ সালে দুই জার্মানি একত্রিত হয়। বার্লিন প্রাচীরে নির্মিত বিখ্যাত পেইন্টিংটি ব্রান্ডেনবার্গ গেইট নামে পরিচিত।
- বলকান অঞ্চল: এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জর্জিয়া, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াকে একত্রে ট্রান্স ককেশাস অঞ্চল বলা হয়। সার্বিয়ান একনায়ক স্লোবোদান মিলোসেভিচ “বলকানের কসাই” নামে পরিচিত ছিলেন।
ভৌগোলিক সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন
ইউরোপের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এটিকে অনন্য করে তুলেছে। এখানকার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ থেকে শুরু করে দীর্ঘতম নদী পর্যন্ত সবই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
বিষয় | নাম | বিবরণ |
সর্বোচ্চ বিন্দু | মাউন্ট এলব্রুস | ৫,৬৩৩ মিটার |
সর্বনিম্ন বিন্দু | কাস্পিয়ান সাগর | -২৮ মিটার |
বৃহত্তম সাগর | ভূমধ্যসাগর | আয়তন ২৫ লক্ষ ১০ হাজার বর্গ কিমি |
দীর্ঘতম নদী | ভলগা | |
বৃহত্তম দ্বীপ | গ্রেট ব্রিটেন | |
বৃহত্তম উপদ্বীপ | স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপদ্বীপ | |
দীর্ঘতম পর্বতমালা | আল্পস পর্বতমালা | |
বৃহত্তম সুড়ঙ্গপথ | চ্যানেল টানেল |
Export to Sheets
ইউরোপের অঞ্চলভিত্তিক দেশসমূহ
ভৌগোলিকভাবে ইউরোপকে চারটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
পূর্ব ইউরোপ (১৩টি দেশ)
বেলারুশ, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন, আর্মেনিয়া, সাইপ্রাস এবং জর্জিয়া।
উত্তর ইউরোপ (১০টি দেশ)
ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য।
দক্ষিণ ইউরোপ (১৬টি দেশ)
আলবেনিয়া, অ্যান্ডোরা, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ভ্যাটিকান সিটি, ইতালি, মাল্টা, মন্টিনিগ্রো, পর্তুগাল, সান মারিনো, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, মেসিডোনিয়া এবং কসোভো।
পশ্চিম ইউরোপ (৯টি দেশ)
অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, লিশটেনস্টাইন, লুক্সেমবার্গ, মোনাকো, নেদারল্যান্ডস এবং সুইজারল্যান্ড।
বিশেষ অঞ্চল পরিচিতি
কিছু দেশ তাদের ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক মিলের কারণে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
- বাল্টিক রাষ্ট্র (৩টি): এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া।
- স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্র (৫টি): আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড।
- বলকান রাষ্ট্র (১২টি): সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, কসোভো, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস, রোমানিয়া।
- সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৫টি): রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, মালদোভা, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান।
- সাবেক যুগোস্লাভিয়া (৭টি): সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, কসোভো।
সাধারণ জ্ঞান
ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
০১. ‘নাগার্নো-কারাবাখ’ কোন দুটি দেশের করিডোর? * উত্তর: আজারবাইজান-আর্মেনিয়া।
০২. আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি? * উত্তর: ভ্যাটিকান।
০৩. রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শহর কোনটি? * উত্তর: ভ্লাদিভস্টক।
০৪. বসনিয়া কোন দেশের অঙ্গরাজ্য ছিল? * উত্তর: যুগোশ্লাভিয়া।
০৫. ইউরোপের বৃহত্তর নগরী কোনটি? * উত্তর: প্যারিস।