দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ: বৈচিত্র্য আর সৌন্দর্যের এক মহাদেশ

ভৌগোলিক কুইজ

ভৌগোলিক কুইজে স্বাগতম!

বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশ ও স্থান সম্পর্কে আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আপনি ৩০ সেকেন্ড সময় পাবেন।

30

Question text

যোগাযোগ করতে ক্লিক করুন

ফলাফল

আপনার স্কোর এখানে দেখানো হবে।

দক্ষিণ আমেরিকা, যাকে প্রায়শই নতুন বিশ্ব বলা হয়, পৃথিবীর বুকে এক অসাধারণ বৈচিত্র্যময় মহাদেশ। আয়তনে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার (যা পৃথিবীর মোট আয়তনের ১২ শতাংশ) নিয়ে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। মোট ১২টি স্বাধীন দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই মহাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও দেশসমূহ

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ হলো ব্রাজিল, যা আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই মহাদেশের বৃহত্তম। এর বিপরীতে, আয়তনে এবং জনসংখ্যায় সবচেয়ে ছোট দেশ হলো সুরিনাম। ব্রাজিল একমাত্র দেশ যা একসময় পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল এবং এখন পর্তুগিজ ভাষাভাষীর দেশ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, স্পেনের বিশাল উপনিবেশিক সাম্রাজ্য মহাদেশের অধিকাংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণ আমেরিকার দুটি দেশ, বলিভিয়াপ্যারাগুয়ে, সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত।

এই মহাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। মহাদেশের মোট আয়তনের ৫২ শতাংশই বনভূমি, যা এখানকার প্রাকৃতিক গুরুত্বের পরিচয় দেয়। এর উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭,৭০০ কিলোমিটার, যা সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণ।

প্রাকৃতিক সম্পদ ও ল্যান্ডমার্ক

দক্ষিণ আমেরিকা প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে ভরপুর। এখানে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা, আন্দিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার কোল ঘেঁষে বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজ অবস্থিত, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতার রাজধানী। আন্দিজের আরেক বিস্ময় হলো বিশ্বের উচ্চতম হ্রদ টিটিকাকা, যা বলিভিয়ায় অবস্থিত।

মহাদেশের জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে উচ্চতম হলো এঞ্জেলস জলপ্রপাত। নদী হিসেবে, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পৃথিবীর প্রশস্ততম নদী হলো আমাজন, যা এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাজন অববাহিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্টের আশ্রয়স্থল। এছাড়া, এখানকার দীর্ঘতম অনলদী হলো মেন্ডেইরা এবং বৃহত্তম হ্রদ হলো টিয়েয়রা

অর্থনৈতিকভাবে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো বিভিন্ন সম্পদে সমৃদ্ধ। ব্রাজিল কফি উৎপাদনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। বলিভিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রদ উৎপাদনকারী দেশ। চিলি বিশ্বের বৃহত্তম তাম্র উৎপাদনকারী দেশ। অন্যদিকে, কলম্বিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ভোজ্য তৈল উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত।

সংস্কৃতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

দক্ষিণ আমেরিকা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও অনেক সমৃদ্ধ। আর্জেন্টিনা ফুটবল তারকা ম্যারাডোনার জন্য বিখ্যাত, যিনি তার গোল্ডেন বল অর্জনের জন্য পরিচিত। এই মহাদেশে ফুটবল এতোটা জনপ্রিয় যে, লাতিন আমেরিকাকে ফুটবলের উর্বর ভূমি হিসেবে ধরা হয়।

কিছু দেশ তাদের বিশেষ নামে পরিচিত। যেমন, ভেনিজুয়েলা শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র ভেনিসইকুয়েডর কে বলা হয় চির বসন্তের দেশ, কারণ এখানে সারা বছর মনোরম আবহাওয়া থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র কমনওয়েলথ সদস্য দেশ হলো গায়ানা, এবং ওআইসি-এর একমাত্র সদস্য দেশ হলো সুরিনাম

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ একটি বিতর্কিত স্থান, যা ১৯৮২ সালে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে যুদ্ধের কারণ হয়েছিল। এই দ্বীপপুঞ্জকে আর্জেন্টিনা মালভিনাস নামেও ডাকে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে, জুপিটার মন্দির ভেনিজুয়েলার পার্লামেন্ট বা কংগ্রেস ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


উপনামের শহর ও উপত্যকা: বিশ্বজুড়ে নানা নাম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, শহর ও স্থান তাদের ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে কিছু বিশেষ নামে পরিচিত। এই উপনামগুলো তাদের অনন্য পরিচয় বহন করে।

দেশ ও স্থানের উপনাম

  • বাংলাদেশ: এই দেশকে সোনালী আঁশের দেশ, নীরব খনির দেশ এবং ভাটির দেশ বলা হয়।
  • ভারত: পাঞ্জাবকে বলা হয় পঞ্চনদের দেশ
  • জাপান: এটি সূর্যোদয়ের দেশভূমিকম্পের দেশ নামে পরিচিত।
  • নরওয়ে: এটি নিশীথ সূর্যের দেশ এবং হাজার হ্রদের দেশ নামে পরিচিত।
  • ফিনল্যান্ড: এই দেশও হাজার হ্রদের দেশ নামে পরিচিত।
  • মিশর: একে পিরামিডের দেশ এবং শ্বেতহস্তীর দেশ বলা হয়।
  • কানাডা: এর উপনাম হলো ম্যাপল পাতার দেশলিলি ফুলের দেশ
  • অস্ট্রেলিয়া: এটি ক্যাঙ্গারুর দেশপশমের দেশ হিসেবে পরিচিত।
  • পামির মালভূমি: এর উচ্চতার কারণে এটিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়।
  • কিউবা: এটি পৃথিবীর চিনির আধার নামে পরিচিত।
  • বাহরাইন: একে মুক্তার দ্বীপ বলা হয়।
  • আয়ারল্যান্ড: এর অপর নাম পান্নার দ্বীপ
  • অস্ট্রেলিয়া: এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একে দ্বীপ মহাদেশও বলা হয়।
  • শিকাগো: এই শহরটিকে পৃথিবীর কসাইখানা বলা হয়।

শহরের উপনাম

  • ঢাকা (বাংলাদেশ): এটি মসজিদের শহররিকশার শহর নামে পরিচিত।
  • কলকাতা (ভারত): এটি রাজপ্রাসাদের শহর নামে পরিচিত।
  • রোম (ইতালি): এটি সাত পাহাড়ের শহর এবং চির শান্তির শহর হিসেবে বিখ্যাত।
  • প্যারিস (ফ্রান্স): এটি আলোর শহরসংস্কৃতির শহর নামে পরিচিত।
  • শিকাগো (যুক্তরাষ্ট্র): এই শহরকে উদ্যানের শহর এবং বাতাসের শহর বলা হয়।
  • নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র): এটি গগনচুম্বী অট্টালিকার শহর বা স্কাইস্কেপাসের শহর হিসেবে পরিচিত।
  • কিটো (ইকুয়েডর): এই শহরটি চির বসন্তের নগরী নামে পরিচিত।
  • করাচি (পাকিস্তান): এটিকে পাকিস্তানের প্রবেশদ্বার বলা হয়।
  • মুম্বাই (ভারত): এটি ভারতের প্রবেশদ্বার নামে পরিচিত।
  • ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া): এটি ইউরোপের প্রবেশদ্বার
  • জিব্রাল্টার: এটিকে ভূমধ্যসাগরের প্রবেশদ্বার বা চাবি বলা হয়।
  • লাসা (তিব্বত): এর দুর্গমতার কারণে এটিকে নিষিদ্ধ শহর বলা হয়।
  • কায়রো (মিশর): এই শহরকে রাতের নগরী বলা হয়।

এই উপনামগুলো কেবল নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিটি স্থান বা দেশের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটায়। এটি আমাদের বিশ্বকে আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top