বাংলাদেশ: ভৌগোলিক অবস্থান, সীমানা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ও ভূগোল কুইজ
০০

Powered by Computer Solution & Training Center

কুইজ সম্পন্ন!

ভূগোল বা Geography শব্দটি মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাকে নির্দেশ করে। প্রাচীন গ্রিক ভূগোলবিদ ইর‍্যাটোস্থেনিস প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন, যেখানে ‘Geo’ অর্থ পৃথিবী এবং ‘Graphy’ অর্থ বর্ণনা। মানুষ এবং পৃথিবীই হলো ভূগোলের মূল উপজীব্য। ভূগোলবিদদের মতে, ভূগোল হলো পরিবর্তনশীল পৃথিবীর বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের সাথে তার পারিপার্শ্বিকতার সম্পর্ক নিয়ে একটি সুবিন্যস্ত আলোচনা।

প্রখ্যাত ভূগোলবিদদের সংজ্ঞা:

  • রিচার্ড হার্টশোন (১৯৫৯): “পৃথিবীর পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ, যুক্তিসঙ্গত ও সুবিন্যস্ত বিবরণ প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো ভূগোল।”
  • অধ্যাপক ম্যাকনি (১৯৬২): “মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকাণ্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলোচনা করে তাই ভূগোল।”
  • অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্প: “পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল।”

ভূগোল शास्त्र বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত, যার মধ্যে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মানবিক, এবং আঞ্চলিক ভূগোল অন্যতম।

ভূগোল শাস্ত্রের কয়েকজন দিকপাল

ভূগোল ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথচলায় বেশ কয়েকজন মনীষী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। নিচে তাদের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:

ভূগোলবিদ/বিজ্ঞানীপরিচয় ও অবদান
ইরাটস্থেনিসপ্রাচীন গ্রিক ভূগোলবিদ, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। তিনিই প্রথম ‘Geography’ শব্দটি ব্যবহার করেন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়ে ধারণা দেন।
ক্লডিয়াস টলেমিটলেমি নামে পরিচিত এই গ্রিক গণিতবিদ ও ভূগোলবিদ পৃথিবীর মানচিত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নিকোলাস কোপার্নিকাসবিখ্যাত এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণাকে বদলে দেয়।
এডমান্ড হ্যালিইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ভূ-পদার্থবিদ। তিনি দেখান যে, সৌর উত্তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গতিকে প্রভাবিত করে এবং ব্যারোমেট্রিক চাপ ও উচ্চতার সম্পর্ক স্থাপন করেন।
আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টজার্মান এই বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী উদ্ভিদ ভূগোলের উপর প্রথম গবেষণা করেন এবং জীব ভূগোলের ভিত্তি স্থাপন করেন।
হিপ্পার্কাসজ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত। তার নামে ‘হিপ্পার্কাস মানচিত্র’ নামক মহাজাগতিক মানচিত্র তৈরি হয়েছে।
এডুইন হাবলমার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী যিনি মহাবিশ্বের ক্রমসম্প্রসারণ আবিষ্কার করেন এবং ছায়াপথ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এর ভৌগোলিক অবস্থান এবং আয়তন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

বিষয়বিবরণ
অবস্থান২০°৩৪’ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬°৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত।
৮৮°০১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২°৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত।
মোট আয়তন১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল
আয়তনে বিশ্বে অবস্থানবিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী ৯০তম থেকে ৯৫তম এর মধ্যে (ছোটদের বিশ্বকোষ: ৯০তম, উইকিপিডিয়া: ৯৪তম, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস: ৯১তম)।

বাংলাদেশের সীমানা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চল

বাংলাদেশের মোট সীমারেখা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এর সীমানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে বিভিন্ন উৎসের তথ্যে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়।

সীমানা সম্পর্কিত তথ্য:

বিবরণমাধ্যমিক ভূগোল অনুযায়ীবর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) অনুযায়ী
মোট সীমারেখা৪,৭১২ কি.মি.৫,১৩৮ কি.মি.
স্থলসীমা৩,৯৯৫ কি.মি.৪,৪২৭ কি.মি.
উপকূলীয় বা সমুদ্রসীমা৭১৬ কি.মি.৭১১ কি.মি.
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত৩,৭১৫ কি.মি.৪,১৫৬ কি.মি.
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত২৮০ কি.মি.২৭১ কি.মি.

পার্শ্ববর্তী দেশ ও অঞ্চল:

  • উত্তরে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্য।
  • পূর্বে: ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং মিয়ানমার।
  • পশ্চিমে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
  • দক্ষিণে: বঙ্গোপসাগর।

বাংলাদেশের সাথে দুটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে— ভারত ও মিয়ানমার। ভারতের পাঁচটি রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম) বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত। ভারতের মণিপুর রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের কোনো সীমান্ত নেই।

সমুদ্রসীমা, ছিটমহল ও ভূ-রাজনীতি

বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের একটি বড় অংশ এর সমুদ্রসীমা এবং প্রতিবেশীদের সাথে সীমান্ত চুক্তি দ্বারা প্রভাবিত।

সমুদ্রসীমা:

  • রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা: উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২ কি.মি.)।
  • অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা (Exclusive Economic Zone): উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কি.মি.)। (১ নটিক্যাল মাইল = ১.৮৫২ কি.মি.)
  • মোট সমুদ্র অঞ্চল: ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার

সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি:

  • মিয়ানমারের সাথে: জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (ITLOS) ১৪ মার্চ ২০১২ সালে রায় প্রদান করে। এর ফলে বাংলাদেশ ১,১১,৬৩১ বর্গ কিলোমিটার জলসীমা লাভ করে।
  • ভারতের সাথে: নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালত (PCA) ৭ জুলাই ২০১৪ সালে রায় দেয়। বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার লাভ করে। ‘ভূ-রাজনীতি’ মূলত সমুদ্র অর্থনীতি বা Blue Economy-এর মতো বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত।

ছিটমহল বিনিময়:

  • মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমানা চিহ্নিত করতে ১৬ মে ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
  • চুক্তি কার্যকর: ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে (৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাতে) ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হয়।
  • ফলাফল: বাংলাদেশ ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭,১৬০.৬৩ একর ভূমি) এবং ভারত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭,১১৩.০২ একর ভূমি) লাভ করে।
  • তিন বিঘা করিডোর: এর আয়তন ১৭৮ মিটার × ৮৫ মিটার

বিভাগ ও জেলাভিত্তিক সীমান্তবর্তী অঞ্চল

বাংলাদেশের ৩২টি জেলার সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি ভারতের সাথে এবং ৩টি মিয়ানমারের সাথে সংযুক্ত। রাঙ্গামাটি একমাত্র জেলা যার সাথে ভারত ও মিয়ানমার উভয় দেশেরই সীমান্ত রয়েছে।

বিভাগসীমান্তবর্তী জেলার সংখ্যাসীমান্তবর্তী স্থান (উদাহরণ)
রংপুর বিভাগ৬টিদহগ্রাম, বুড়িমারি (লালমনিরহাট); বাংলাবান্ধা (পঞ্চগড়); হিলি (দিনাজপুর)
রাজশাহী বিভাগ৪টিসোনা মসজিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ); চর মাঝারদিয়ার (রাজশাহী)
ময়মনসিংহ বিভাগ৪টিনাকুগাঁও (শেরপুর); কড়ইতলী (ময়মনসিংহ)
সিলেট বিভাগ৪টিতামাবিল, ভোলাগঞ্জ (সিলেট); চাতলাপুর (মৌলভীবাজার)
চট্টগ্রাম বিভাগ৬টিরামগড় (খাগড়াছড়ি); বিলোনিয়া (ফেনী); আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

মিয়ানমারের সাথে সীমান্তবর্তী জেলা: মিয়ানমার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর সাথে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো:

  • রাঙ্গামাটি (থেগামুখ, জলাইতলি)
  • বান্দরবান (ঘুমধুম, তুমব্রু)
  • কক্সবাজার (হ্নীলা, নাইটাংপাড়া)

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কোনো জেলার সাথেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংযোগ নেই।
  • বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সাথে ভারতের কোনো সংযোগ নেই।
  • সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলাই সীমান্তবর্তী।
  • বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত পরস্পরকে ছুঁয়েছে রাঙ্গামাটিতে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top