শুনুন মশাই, দিন বদলেছে! এখন আর ভিডিও বানাতে নিজের গলা ফাটানোর দরকার নেই। নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর মতো আরাম করে ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারবেন, আর আপনার কানের কাছে মশা ভনভন করলেও টেরও পাবেন না। কারণটা কী? কারণ হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ওরফে AI!

চলুন, দেখে নিই এই অদ্ভুতুরে কাজের ধাপগুলো:
ধাপ ১: স্ক্রিপ্ট লেখো বাবা, স্ক্রিপ্ট! (ভিডিওর পাণ্ডুলিপি)
ভিডিও বানাবেন, অথচ কী বলবেন জানেন না? আরে বাবা, এটা তো ঠিক না! আগে সুন্দর করে একটা পাণ্ডুলিপি তৈরি করুন। কী বলতে চান, সেটা বাংলায় হোক বা ইংরেজিতে, সুন্দর করে টুকে নিন।
যেমন ধরুন: “আজ আমরা দেখব, কীভাবে পকেট থেকে একটা টাকাও খরচ না করে, ইউটিউব থেকে লাখ লাখ টাকা কামানো যায়…” (বিশ্বাস না হলেও, লিখতে তো দোষ নেই, তাই না?)
ধাপ ২: AI-এর গলা ধার করুন! (Text-to-Speech-এর জাদু)
আপনার নিজের গলা শুনতে কেমন যেন লাগে? বা হয়তো ভয়ে মাইকের সামনেই যেতে চান না? কোনো সমস্যা নেই! AI এখন আপনার লেখাগুলোকে এমন সুন্দর করে পড়ে দেবে, মনে হবে কোনো রেডিও জকি কথা বলছে। আপনার নিজের গলা লাগবেই না!
কিছু ঝাক্কাস সাইট:
- ElevenLabs.io: যদি ব্রিটিশ এক্সেন্ট বা আমেরিকান এক্সেন্টে ইংলিশ বলতে চান, তাহলে এখানে ঢুঁ মারুন। (বাংলা ভালোবাসেন? দূর থেকে নমস্কার জানান!)
- Bhashini.gov.in/tts: এই তো আমাদের ‘আপনজন’! বাংলাতে সুন্দর করে কথা বলার জন্য এর জুড়ি নেই।
- ttsdemo.com: এটা আরেকটা মজার জায়গা, বাংলা Text-to-Speech-এর জন্য মন্দ না।
ধাপ ৩: AI-কে বলুন, “ভিডিও বানাও!” (Text → Video-এর কেরামতি)
এবার আসল খেলা! আপনার লেখাটা AI-এর হাতে ধরিয়ে দিন। সে আপনার লেখা অনুযায়ী ভিডিও বানিয়ে দেবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? দেখুন তবে:
কিছু সেরা টুলস (ফ্রিতে কাজ সারতে চাইলে):
- invideo.io: আপনি শুধু লেখাটা দিন, সে আপনার হয়ে ভিডিও বানাবে। টেমপ্লেট, ভয়েস, এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—সব সে নিজেই দেবে। আপনি শুধু বসে বসে সিগারেট টানুন।
- pictory.ai: এটাও কম যায় না! শুধু লেখা দিলেন, আর আপনার হাতে গরম গরম ভিডিও চলে এলো। ফ্রি ট্রায়াল আছে, একবার গুঁতো দিয়ে দেখতে পারেন।
- veed.io: ইন্টারফেসটা খুবই সহজ। মনে হবে, ছোটবেলায় খেলনা গাড়ির মতো ভিডিও বানিয়ে ফেলছেন। মজার ব্যাপার হলো, এখানে আপনি বাংলা সাবটাইটেলও দিতে পারবেন! (যেন দর্শক আপনার কথার প্রতিটি শব্দ গিলতে পারে!)
- canva.com: আরে বাবা, ক্যানভা তো সব কিছুর সমাধান! ডিজাইন থেকে শুরু করে ভিডিও, সব হয় এখানে।
ধাপ ৪: গান-বাজনা আর ছবি-টবি দিন (ভিডিও সাজানোর পালা)
শুধু কথা বললে তো আর হবে না! ভিডিওটাকে একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে দিতে হবে। কিছু মজার ছবি, আর ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা গান-বাজনা থাকলে ভিডিওটা দেখতে দারুণ লাগবে।
ফ্রি ছবি আর ভিডিও ক্লিপের ঠিকানা:
- pexels.com
- pixabay.com
- unsplash.com
ফ্রি মিউজিকের জন্য:
- Youtube Audio Library: ইউটিউবের নিজের লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখুন, হাজার হাজার কপিরাইট ফ্রি মিউজিক আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। (কপিরাইট ঝামেলা থেকে বাঁচতে চাইলে এখানে যান, নাহলে কপালে দুঃখ আছে!)
ধাপ ৫: ভিডিও এডিট ও ডাউনলোড (শেষ মূহুর্তের ঘষা-মাজা)
প্রায় শেষ! এবার ভিডিওটাকে একটু ছাঁটাই-বাছাই করে, যেখানে যা দরকার, লাগিয়ে ফেলুন।
ফ্রি ভিডিও এডিটিং টুল:
- capcut.com: পিসি হোক বা মোবাইল—সবখানেই সমান তালে কাজ করে।
- clipchamp.com: উইন্ডোজ ১১-এর নতুন বন্ধু, এর মধ্যেই খুঁজে পাবেন।
- Kinemaster: মোবাইলে ভিডিও এডিট করতে চাইলে এটা আপনার সেরা সঙ্গী।
একটা সহজ উদাহরণ (পুরো প্রক্রিয়াটা আরেকবার):
- আপনি লিখলেন: “ঠেলাগাড়ি টানার ৫টি বৈজ্ঞানিক উপকারিতা…” (না না, এটা শুধু উদাহরণ, সত্যি সত্যি এটা নিয়ে ভিডিও বানাবেন না!)
- ElevenLabs বা Bhāshini তে গিয়ে সেই লেখাটাকে কণ্ঠে পরিণত করলেন। (মনে হবে যেন কোনো বিজ্ঞানী কথা বলছেন!)
- Invideo বা Pictory তে গিয়ে লেখাটা দিলেন আর ভিডিও বানিয়ে ফেললেন। (চোখের পলকে কাজ শেষ!)
- CapCut দিয়ে একটু এডিট করলেন, তারপর ইউটিউব বা ফেসবুকে গিয়ে আপলোড করে দিলেন। (বুম! আপনি এখন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর!)
বিশেষ টিপস (কিছু গুরু মন্ত্র):
- ৩০ সেকেন্ড – ২ মিনিটের মধ্যে রাখুন: বেশি বড় ভিডিও মানুষ দেখতে চায় না। ধৈর্য এখন মানুষের কাছে খুব দামি জিনিস।
- সঠিক টাইটেল ও থাম্বনেইল দিন: আপনার ভিডিওর গেটপাস! এটা ভালো না হলে কেউ আপনার ভিডিওতে ক্লিক করবে না।
- কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ও ছবি ব্যবহার করুন: ধরা খেলে কিন্তু খবর আছে! ইউটিউব আপনার ভিডিও ডিলিট করে দেবে, আর আপনার কষ্ট বৃথা যাবে।
- নিয়মিত আপলোড দিন, ধৈর্য ধরুন: এক দিনে সাফল্য আসবে না। লেগে থাকুন, এক দিন না এক দিন ঠিকই আপনার ভিডিও ভাইরাল হবে!